ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম ইউটিউবে আপত্তিকর কমেন্টকারীদের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেবে প্রতিষ্ঠানটি। কুরুচিকর মন্তব্য করলেই সতর্কবার্তা…
মঞ্জুর শাহরিয়ারকে তাৎক্ষণিক বদলির নেপথ্যে!
কোন ঘটনার গভীরে না গিয়ে কেন আমরা এমন মন্তব্যের ঝর তুলি! আপনি যদি ভেবে থাকেন যে,গতকাল শুধু আড়ং এ হানা দেয়ায় কারণেই মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারকে ঢাকা থেকে খুলনায় বদলি করা হয়েছে? তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বলছি কারণ শুধু এটা ই নয়।
চলুন একটু পেছনের দিকে যাই, মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে শুরু থেকেই সততা নিয়ে স্বচ্ছতার সাথে কাজ করে আসছিলেন। অনেকটা মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন বছরের পর বছর নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে। তারপর যখন প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের, তখন তিনি আর কাউকে তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশের অনেক বড় বড় বেনিয়াদের অপরাধ এবং অপকর্মের আখড়ায় হাত দিয়ে ফেলেছিলেন।
কিন্তু সমস্যা হলো যাদের আখড়ায় ভদ্রলোক হাত দিয়েছিলেন তারা সবাই বাংলাদেশের এক একজন অঘোষিত মাফিয়া। এরা যখন যে রাজনৈতিক দলের সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সে দলে কোটি কোটি টাকা ডোনেট করে। অঢেল টাকার উপহার সামগ্রীর বিনিময়ে কিনে ফেলে হোমরাচোমরা নেতাদেরকে। আর সচিবালয়ের সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাও খুব সহজেই চলে আসে এই বিকিকিনির হাটে।
তবে যে সব সৎ এবং দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদের ওরা বাগে আনতে না পারে তাদের নামের তালিকাও এই ব্যবসায়ী নামক মাফিয়া সিন্ডিকেটের কাছে থাকে। এই মাফিয়া সিন্ডিকেট ওৎ পেতে থাকে কখন কিভাবে সেই লিস্টেড কর্মকর্তাকে রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা যায়। সেই সিন্ডিকেটে শুধু ব্যাবসায়ী মালিক নয় বরং মালিকদের কাছ থেকে সুবিধা ভোগকারী দালালরাও থাকে। সঙ্গত কারণেই সেই সিন্ডিকেট মাফিয়াদের শেকড় বা পিলার অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
যেহেতু মঞ্জুর মোহাম্মদ একদিকে সৎ তাকে কোন ভাবে এতো দিনেও কিনে ফেলা যায়নি,তার উপর উল্টো এই লোক ঢাকা শহরের নামকরা শপিংমল, নারী মাফিয়াদের বিউটি পার্লার, বড় বড় হসপিটাল কাউকেই ছাড় দেয়নি তাই সব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের সিন্ডিকেট তলোয়ারে শান দিয়েই ছিলো।
এরপর গতকাল যখন আড়ং-এ হাত দিয়েছে সেখানেও বর্তমান কর্ণধার আরেক ব্যবসায়ী মাফিয়া নারী তামারা হাসান আবেদ, যার বাবা ফজলে হাসান আবেদ ব্রাক এর প্রতিষ্ঠাতা। ব্রাক এবং আড়ং একই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ব্রাক যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে লোন দেয় তাদের ভাগ্য উন্নয়ন করবে বলে কিন্তু কোন কারণে সেই লোনের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে সেই দরিদ্র ব্যক্তির গোয়ালের গরু, ঘরের চালের টিন খুলে আনার খবর আমরা অনেকেই জানি।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত আড়ং এবং প্রতিষ্ঠাতা বাবার দায়িত্ব যে কন্যা তামারা আরো শক্ত হাতে পরিচালনা করছে তার ফল তো কয়েক বছর থেকে আরো নোংরা ভাবেই দেখে আসছি ১৭০ টাকার বিছানার চাদরের গায়ে কারখানার প্রাইস ট্যাগ না উঠিয়ে তার উপরে নতুন করে আড়ং এর ২৫০০ টাকার প্রাইস ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রির প্রতিবাদ দুবছর আগেই তো দেখেছিলাম। তারপরেও কি আড়ংয়ের কেউ কিছু করতে পেরেছিলো! পারেনি তো, আর পারবেইবা কেন ১৯৭৮ সালে জিয়ার প্রিয়ভাজন হয়ে সে আমলেই যখন খুটি গেড়েছিল সে কি আর এমনি এমনি! গত ৪১ বছর আড়ং যা পরিয়েছে সমাজের তথাকথিত এলিট শ্রেণী সেটা পরেছে মহানন্দে। নতুন নতুন টাকা চোখে দেখা লোক জনেরা পণ্য নয় শুধু ব্রান্ডনেম কিনে নিজেদের এলিট সাজাতে ছুটে যায় আড়ং এ। কারণ ওদের টাকা তো আর আমাদের মতো কষ্টার্জিত সৎ পথের নয় তাই পণ্যের মান বোঝার সামর্থ্য ওদের নেই।
যা বলছিলাম, বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চিকে যারা প্রতিনিয়ত বিষাক্ত করে তুলছে। বাচ্চাদের খাবার,পানি, ওষুধ, দুধ, ফল, মাছ,সবজি সহ সকল কিছুতে যখন ভেজাল মিশিয়ে মানুষের জন্য মৃত্যুকূপ তৈরী করে কোটি কোটি টাকার পাহাড় বানানো ব্যাবসায়ী মাফিয়াদের কমবেশি আমরা সবাই চিনি এবং চিনে ফেলেছিলো মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার নিজেও। তাই সেই চেনা মাফিয়াদের ডেরায় যখন একের পর এক হাত দিয়ে যাচ্ছিলো এই ভদ্রলোক! তাহলে ওরাই বা ছাড়বে কেন? শুধু তো ট্রান্সফার করিয়েছে ঢাকা থেকে খুলনায় ভাগ্যিস পৃথিবী থেকেই ট্রান্সফার করে দেয়নি!
এসব ব্যবসায়ী মাফিয়াদের সমস্ত শক্তি হচ্ছে ব্লাক মানি বা কালোটাকা। শক্তির উৎস কালো টাক দিয়েই এরা রাজনীতি ও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সেখানে যখন পর পর এতো বার এতো জন বাধাগ্রস্ত হয়েছে তবে কি এভাবে দেখতেই থাকবে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এর বিরত্বগাথা!
তাই সব ব্যবসায়ী মাফিয়া সিন্ডিকেট কাল একত্র হয়ে মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে বেচারাকে স্ট্যান্ড রিলিজ শুধু নয় সেই সাথে দপ্তর বদলে দিয়ে নিজেদের ক্ষমতার কিছুটা ঝলক দেখিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে ওরা মৌন ম্যাসেজ দিয়ে সবাইকে এটা বুঝিয়ে দিয়েছে যে,পরবর্তীতে কেউ ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তাদের অবস্থা আরো খারাপ করার ক্ষমতা ওরা রাখে।
ওরা এভাবেই সারা জীবন বাংলাদেশের মানুষের রক্ত চুষে খাবে আর টাকার পাহাড় বানিয়ে নিজেরা এবং নিজেদের আপন জনদের বিদেশে পাঠিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করে বাংলাদেশের মানুষকে ধুকে ধুকে মেরে ফেলবে। তবু ওদের বিরুদ্ধে টু শব্দ টি করার অধিকার ও কারো থাকতে পারবেনা! [মাকসুদা সুলতানা ঐক্য]। (লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)