জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে প্লাজমার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় শনাক্ত করেছেন। প্রায় ৬০০ মাইল চওড়া এলাকা (১০০০ কিলোমিটার) জুড়ে এই ঘূর্ণিঝড় দেখা গেছে। প্রাকৃতিক এই ঘটনা উত্তর মেরুর চৌম্বকক্ষেত্রের উপরে প্রত্যক্ষ করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের উপরের বায়ুমণ্ডলে থাকা প্লাজমার ফলেই এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনাকে ‘স্পেস হারিকেন’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

সম্প্রতি ‘নেচার কমিউনিকেশন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট প্রায় ৮ ঘণ্টা ধরে এই ‘স্পেস হারিকেন’ ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন চিনের শ্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। তাদের গবেষণাপত্রই এবার প্রকাশ করা হয়েছে ‘নেচার কমিউনেকশনস’ জার্নালে।

গবেষণাপত্রে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, দ্রুত উড়ন্ত সৌর বায়ুর এ ধরনের হারিকেন খালি চোখে দেখা যায় না। তবে উত্তর মেরু অতিক্রম করার সময় ৪টি আবহাওয়া স্যাটেলাইট এমন একটি গঠন শনাক্ত করেছিল, যা পৃথিবীতে প্রচলিত ঘূর্ণিঝড়ের মতো নয়। এই স্পেস হারিকেনের ক্ষেত্রে মূল উপাদান বায়ুমণ্ডলে থাকা প্লাজমা। গোলাকার রিংয়ের আকারে তীব্র গতিতে ঘুরতে থাকে প্লাজমা। ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চলে ঘূর্ণন।

উত্তর মেরুতে যে স্পেস হারিকেন লক্ষ্য করা গেছে, তা টানা ৮ ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর ধীরে ধীরে শক্তিক্ষয় হয়ে শান্ত হয়েছিল। পৃথিবীতে হওয়া ঘূর্ণিঝড় হারিকেনের প্রভাবে যেখানে পানির প্রবল বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, সেখানে এই স্পেস হারিকেনের প্রভাবে পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে ইলেকট্রনের বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

চিন, আমেরিকা, নরওয়ে এবং ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী চারটি ভিন্ন ডিফেন্স মেট্রোলজিক্যাল স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম- এর সাহয্যে স্পেস হারিকেন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এর পাশাপাশি তারা সাহায্য নিয়েছেন থ্রিডি ম্যাগনেটোস্ফিয়ার মডেলিং-এর। এরপরই প্রকাশ করেছেন স্পেস হারিকেনের স্যাটেলাইট ছবি।

গবেষণাপত্রের প্রধান লেখক ও শ্যানডং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিং-হে ঝাং বলেন, ‘এতদিন অবধি স্পষ্টভাবে জানা ছিল না যে, পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে প্লাজমার ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। সুতরাং এ জাতীয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তা প্রমাণ করতে পারাটা আসলেই অবিশ্বাস্য একটি ব্যাপার।’

গবেষকদের মতে, ‘স্পেস হারিকেন’ নামটা শুনতে ভয়ানক কিছু মনে হলেও, সাধারণত এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় বিপজ্জনক নয়। তবে জিপিএস, রেডিও সিগন্যাল, এমনকি স্যাটেলাইটের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।

 

Pearl IT
shahadat.hossen154@gmail.com

Would you like to share your thoughts?

Your email address will not be published. Required fields are marked *