mars

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বৈজ্ঞানিক কোনো কল্পকাহিনি নয়, বাস্তবেই তা সম্ভব।আর তা হচ্ছে, মঙ্গলগ্রহের লাল মাটিতে শাকসবজির চাষ। মঙ্গলে চাষাবাদ করতে কী লাগবে? সম্প্রতি ‘দ্য মার্সিয়ান’ নামের এক চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে তা। গবেষকেরা বলছেন, যা-ই লাগুক না কেন, তাঁদের কাছে সে ধরনের প্রযুক্তি এখন রয়েছে। মঙ্গলবাসীরা মঙ্গলে শাকসবজি চাষের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেন।

download (12)

২০৩০ সাল নাগাদ মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নাসা। তবে এর আগে অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে। ব্যাপক কাজ করতে হবে তাদের। এর মধ্যে রয়েছে মঙ্গলে যাতায়াতে রকেট তৈরি ও পরীক্ষা করা। দীর্ঘদিন মঙ্গলে অবস্থান করলে মানব শরীরের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে কি না, সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

মঙ্গলে যাওয়ার রাস্তাটিও অবশ্য কম দূরত্বের নয়। মঙ্গলে বর্তমানে যে কিউরিওসিটি নামের রোবটযান রয়েছে, সেটি পৌঁছাতে আট মাস সময় লেগেছে। বর্তমানে নাসার গবেষকেরা এই সময় কমিয়ে ছয় মাসে আনতে কাজ করছেন।

অবশ্য মঙ্গলযাত্রীর এক বছরের এই আসা-যাওয়ার পথে সতেজ কোনো খাবার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্য নাসা যদি মঙ্গলগ্রহে বাগান করে ফেলতে পারে, তবে তা মঙ্গলযাত্রীর জন্য যথেষ্ট সুবিধাজনক হবে। এ লক্ষ্য নিয়েই কাজে নেমে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ স্টেট ইউনিভার্সিটির প্ল্যান্টস, সয়েলস অ্যান্ড ক্লাইমেট বিভাগের গবেষক ব্রুস বাগবি।

বাগবি বলেন, নাসার সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। মহাকাশে জৈবিক জীবন ধারণের উপযোগী সিস্টেম গড়ে তুলতে নাসাকে সাহায্য করছি। এর মধ্যে মহাকাশ স্টেশনে বসবাসের পাশাপাশি, চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহের প্রকল্পও রয়েছে। পৃথিবী থেকে স্বতন্ত্র একটি ব্যবস্থা তৈরি করে ফেলার লক্ষ্যে কাজ করছি।’

প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে পৃথিবীর বাইরে কোনো গ্রহে চাষাবাদ করার পদ্ধতি নিয়ে কথাবার্তা চলছে। নাসার সঙ্গে এ ধরনের একটি পদ্ধতি তৈরিতে কাজ করছি। এ ধারণা থেকেই ‘দ্য মার্সিয়ান’ ছবিতে দেখানো বিষয়টি উঠে এসেছে। মঙ্গলগ্রহে আলু চাষের যে দৃশ্যটি মার্ক হুইটনি তাঁর ছবিতে দেখিয়েছেন, তা বেশ আলোচিত হয়ে উঠেছে।

যাঁরা এর আগে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে লেটুস পাতা জন্মানোর খবর পড়েছেন, তাঁরা হয়তো জানেন যে এর পেছনেও বাগবি ও তাঁর গবেষক দলের হাত রয়েছে। মূলত তাঁরাই বিশেষ চেম্বারে উদ্ভিদ জন্মানোর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের দাবি, মহাকাশে বা মঙ্গলগ্রহের মতো ভিন্ন কোনো গ্রহে তাঁদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতেই উদ্ভিদ জন্মানো যাবে।

গবেষক বাগবি পৃথিবীতে উদ্ভিদের যে গ্রোথ চেম্বার নিয়ে কাজ করছেন তা মূলত বদ্ধ একটি প্রক্রিয়া। বিশালাকার রেফ্রিজারেটরের মতো একটি পদ্ধতিতে হাইড্রোপনিক্যালি প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। এখানে প্রাকৃতিক কোনো আলোর দরকার হয় না। আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে উদ্ভিদকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন বা মহাকাশে পরিবেশকে উদ্দীপনার মাধ্যমে উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা হয়।

গবেষক বাগবি বলেন, এ ক্ষেত্রে মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। অনেকে মনে করেন, মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় কী না-কী ঘটতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যাকর্ষণ না থাকলেও উদ্ভিদের কোনো ক্ষতি হয় না। আমাদের মনে হয়, মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় উদ্ভিদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াটি আরও দ্রুত হয়। তার বেড়ে ওঠার জন্য মাধ্যাকর্ষণের সঙ্গে লড়তে হয় না, বাতাস না থাকায় অতিরিক্ত শক্তি খরচ করতে হয় না। ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়তা থাকে না, তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রিত থাকে।

তবে মঙ্গলগ্রহের অভিযাত্রার ক্ষেত্রে নতুন জটিলতার বিষয়গুলো ভাবতে হবে। মঙ্গলগ্রহের অভিযাত্রীকে কমপক্ষে কয়েক মাস সেখানে থাকতে হবে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বৃক্ষরোপণ ও বাগান করার মতো কাজগুলো করতে হবে। যদিও মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে চাষাবাদ আর মঙ্গলের মাটিতে চাষাবাদ সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ‘দ্য মার্সিয়ান’ ছবিতে যা দেখানো হয়েছে, সে ধারণার কম-বেশি হবে। কোনটি ঠিক আর কোনটি সঠিক নয়, তা ঠিক করে বলা যায় না। তবে ছবিতে দেখানো ধারণাটি সঠিক।

Pearl IT
shahadat.hossen154@gmail.com

Would you like to share your thoughts?

Your email address will not be published. Required fields are marked *