নিউজ ডেস্ক:
সম্ভাবনা থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) ব্যবসা। পিকে হালদারের হাল ট্রাভেল সার্ভিস (হাল ট্রিপ নামে পরিচিত) গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়। এবার একই পথে পা বাড়ালো আরেক ওটিএ ‘২৪ টিকেট ডটকম’। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

যাত্রা শুরুর পর থেকেই ‘২৪ টিকেট ডটকম’ গ্রাহক টানতে অস্বাভাবিক মূল্যছাড়ের অফার দেওয়া শুরু করে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসসহ নানা উৎসবকে কেন্দ্র করে দেয় বিশেষ অফার, এমনকি বিনামূল্যের টিকিটও! এয়ারলাইন্স থেকে ৭ শতাংশ হারে কমিশন পেলেও এজেন্সিগুলোকে কাছে টানতে তাদের কমিশন দেয় ১২ শতাংশ পর্যন্ত। বাড়তি লাভের আশায় অনেক ট্রাভেল এজেন্সি যুক্ত হয়ে এ প্রতিষ্ঠানে।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর অভিযোগ, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে হুট করে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির ফোন নম্বরগুলো। অনেকে মহাখালী ডিওএইচএস-এ গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে তালা ঝুলতে দেখে। এক পর্যায়ে অনলাইনেও গায়েব হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির মালিক আব্দুর রাজ্জাকের ফোন নম্বর বন্ধ পেয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই কাফরুল থানায় জিডি ও মামলা করেন। আব্দুর রাজ্জাকের গ্রামের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, কাফরুল থানায় কমপক্ষে ২০ ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে জিডি করেছেন। ২১ মে আইকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ইব্রাহিম একটি জিডি করেন। তিনি বলেন, আব্দুর রাজ্জাকের ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাইনি। বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আমি তাদের কাছে এক লাখ টাকা পাবো।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের মে’তে যাত্রা শুরু করে অনলাইন টিকেটিং এজেন্সি ২৪ টিকেট ডটকম (www.24tkt.com)। রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস-এ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান। তখন প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, তারা বিডি ট্যুরিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বিডি ট্যুরিস্টেরও একক মালিকানায় রয়েছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় কাগজে-কলমে আছে পাঁচজনের নাম। তারা হলেন, নাসরিন সুলতানা, মো.আব্দুর রাজ্জাক, আসাদুল ইসলাম, প্রদ্যোতবরণ চৌধুরী ও মিজানুর রহমান। মূল উদ্যোক্তা মো.আব্দুর রাজ্জাকের (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) বোন নাসরিন সুলতানা। আর তাদেরই বন্ধু আসাদুল ইসলাম। তিনি ছিলেন পরিচালক (ফিন্যান্স) পদে। বাকি দুজন বিনিয়োগকারীর মধ্যে প্রদ্যোতবরণ ছিলেন পরিচালক।

জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রদ্যোতবরণ চৌধুরী এবং মিজানুর রহমানও থানায় জিডি করেছেন। প্রদ্যোতবরণ প্রতিষ্ঠানটির সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে গত ডিসেম্বরে অব্যাহতি দিয়ে দুবাই চলে যান তিনি।

মিজানুর রহমান বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকলেও কোনও পদে ছিলেন না। তিনি গত ১৯ মে কাফরুল থানায় জিডি করেন। জিডিতে তিনি দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় থাকলেও তিনি পরিচালনায় যুক্ত ছিলেন না। প্রায় দুই বছর পর তিনি জানতে পারেন এ প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে পাবে। এসব হিসাব নিয়ে কথা বললে তাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে দুবাইতে থাকা প্রদ্যোতবরণ চৌধুরীর বাবা পিয়ুষ কান্তি চৌধুরী ছেলের পক্ষে সিলেটে কোতয়ালী থানায় জিডি করেন। ২২ মে করা জিডিতে বলা হয়, আমার ছেলে দুবাইতে আছেন। লকডাউনের কারণে দেশে আসতে পারছেন না। নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি জিডি করেছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য আব্দুর রাজ্জাক ও নাসরিন সুলতানাকে পাওয়া যায়নি। দুজনেরই ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সূত্র : বাংলাট্রিবিউন।

Pearl IT
shahadat.hossen154@gmail.com

Would you like to share your thoughts?

Your email address will not be published. Required fields are marked *