নিউজ ডেস্ক: ‘শর্টস’ নির্মাতাদের প্রতি মাসে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউটিউব। ভিডিও…
বাংলাদেশি ৫ স্টার্টআপকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় ডেমো ডে সিরেমনি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় আইডিয়া প্রকল্পের একটি অন্যতম উদ্যোগ হলো বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ আয়োজন ‘আইডিয়াথন’ (ideaTHON) কনটেস্ট।
মঙ্গলবার এই কনটেস্টের বিজয়ী সেরা পাঁচ বাংলাদেশি স্টার্টআপকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণের আওতায় কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) কর্তৃক আয়োজন করা হয় ‘বাংলাদেশ ফ্রন্টিয়ার স্টার্টআপস্ বিজনেস প্রিপ্যারেশন সাপোর্ট’ শীর্ষক ভার্চুয়াল ডেমো ডে সিরেমনি।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, এই আয়োজনে বাংলাদেশি পাঁচ বিজয়ী স্টার্টআপ বিচারকদের সামনে প্রেজেন্টেশন দেন এবং সবশেষে এএনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেডকে প্রথম স্থানকারী বিজয়ী হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে সংযুক্ত হন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭৩ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই কর্মসূচি আয়োজনের জন্য প্রতিমন্ত্রী কেপিসি এবং বাংলাদেশ ফ্রন্টিয়ার স্টার্টআপস বিজনেস প্রিপ্যারেশন সাপোর্ট প্রজেক্টকে ধন্যবাদ জানান, যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের আরেকটি মাইলফলক যোগ করেছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার একটি ভিশন শেয়ার করেন। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং এটি একটি অনুপ্রেরণামূলক বাস্তবতা। তিনি অনুষ্ঠানে আরও বলেন, লকডাউনের কারণে দেশগুলো অর্থনৈতিক মন্দার সম্মুখীন হলেও দেশের মানুষের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে বাংলাদেশ।
প্রতিমন্ত্রী জানান, একাডেমিয়াদের জন্য এরই মধ্যে স্কুল ও কলেজে আট হাজারেরও বেশি শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং ১৫ হাজারের বেশি পাইপলাইনে রয়েছে। প্রযুক্তি এবং সৃজনশীলতা মাধ্যমগুলিকে বিকেন্দ্রীভূত করার জন্য প্রায় ৩০০টি ফিউচার অব স্কুল বাস্তাবায়ন করা হচ্ছে, যেখানে স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীদের তাদের কোডিং, প্রোগ্রামিং, ক্রিটিকাল থিংকিং, ডিজাইন থিংকিং এবং ভবিষ্যতের প্রযুক্তির জন্য তাদের প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশের সুবিধা দেওয়া হবে।
সারা দেশে ৩৩টি পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩টিরও বেশি বিশেষ 4IR প্রযুক্তিভিত্তিক ল্যাব সরবরাহ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে, যাতে নন-গ্র্যাজুয়েট যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরকে লক্ষ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট এবং থিসিস বা রিয়েল লাইফ প্রোডাক্ট সেবার গবেষণাপত্র চালু করে যাতে আমরা বাজারে নতুন ও উপযুক্ত উদ্ভাবন আনতে পারি এবং একাডেমিয়া থেকে শিল্পের মধ্যে একটি নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ তৈরি করতে পারি, সেই প্রচেষ্টাও চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, বাংলাদেশি স্টার্টআপ যারা এই প্রোগ্রামে যোগদান করেছে, তারা সফলভাবে প্রোগ্রামের প্রত্যাশা এবং প্রাথমিক লক্ষ্যসমূহ পূরণ করেছে। তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করে আরও জানান, বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি ২০০৯ সাল থেকে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে এবং দেশটি দারুণ কাজ করছে। বাংলাদেশ সফলভাবে করোনা মহামারি মোকাবিলা করছে এবং এটি সত্যিই প্রশংসনীয়। পরে তিনি আইডিয়াথন বিজয়ী যারা দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের ছয় মাসের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন, তাঁদের অভিনন্দন জানান।
অনলাইনভিত্তিক এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন এবং বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টারের (কেপিসি) চেয়ারম্যান আন ওয়াং-জি।
এ ছাড়া আয়োজনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব পার্থপ্রতিম দেব, আইডিয়া প্রকল্পের পরিচালক ও যুগ্ম-সচিব মো. আব্দুর রাকিব।
উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষে Let’s Start You Up স্লোগান নিয়ে আয়োজিত আইডিয়াথন কনটেস্টের বিজয়ী পাঁচ দল ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তিন হাজার ১৪৭টি আবেদনকারীর মধ্যে কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়। ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এই আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানে কৃষিয়ান, চার ছক্কা লিমিটেড, এএনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেড, রক্ষী লিমিটেড এবং ছবির বাক্স; এই পাঁচ বাংলাদেশি স্টার্টআপ বিজয়ী হিসেবে পুরস্কার ও সম্মাননা গ্রহণ করে। সবশেষে, এ বছরের ৮ মার্চ ছয় মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণের লক্ষ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন এই বিজয়ী দলগুলো থেকে ১০ জন তরুণ উদ্যোক্তা। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশেষজ্ঞ, উদ্ভাবক এবং সফল স্টার্টআপদের সাথে গত ছয় মাস তাদের ব্যবসা ও বাণিজ্যিকীকরণের সুযোগ বিকাশের চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশের এই তরুণেরা।
কোরিয়া প্রোডাক্টিভিটি সেন্টার (কেপিসি) এবং কোরিয়া ইনভেনশন প্রমোশন অ্যাসোসিয়েশন (কাইপা) স্টার্টআপদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা ও বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সাথে যোগাযোগ সহায়তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট, ডিজাইন, কপিরাইট এবং ট্রেডমার্ক অধিকার প্রাপ্তিতেও তাদের সহায়তা করা হচ্ছে। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের এই উদীয়মান স্টার্টআপগণ ভবিষ্যতে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে দেশের নাম উজ্জ্বল করার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে, এএনটিটি রোবোটিক্স লিমিটেড তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বেইজড লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম নিয়ে অ্যান্জেল ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে তাদের উদ্ভাবন এডুব্লক-এর ২০০ পিসের বেশি রোবটিক কিটসের মূল্য এবং এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানের এক চতুর্থাংশের কাজের খরচের মূল্য বিনিয়োগ ফান্ড হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাব পায়।
এ ছাড়া এ প্রতিযোগিতা ও বিজয়ী পাঁচ স্টার্টআপের ১০ জন তরুণ উদ্যোক্তাকে দক্ষিণ কোরিয়ায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ প্রদানের যাবতীয় খরচ বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা অর্থ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আওতায় আইডিয়া প্রকল্প হতে বহন করা হয়েছে।
This Post Has 0 Comments