ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফরম ইউটিউবে আপত্তিকর কমেন্টকারীদের বিরুদ্ধে এবার ব্যবস্থা নেবে প্রতিষ্ঠানটি। কুরুচিকর মন্তব্য করলেই সতর্কবার্তা…
মহাপ্রলয়ে ছিন্নভিন্ন গ্যালাক্সি, বের হচ্ছে অগ্নিগ্যাস-নক্ষত্র
প্রযুক্তি ডেস্ক: ভূ-গর্ভে একটা হাইড্রোজেন বোমা ফাটিয়ে কিসের বড়াই করছেন উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন? তাকে নস্যির মতো উড়িয়ে দিতে পারে, এমন ভয়ঙ্কর মহাপ্রলয় চলছে গ্যালাক্সিতে! উঠেছে ভয়ঙ্কর ঝড়। এই ধরনের মহাপ্রলয় এর আগে দেখা যায়নি।
যেন ভয়ঙ্কর একটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ খুলে গিয়েছে গ্যালাক্সিতে। লাভার মতো অসম্ভব রকমের গনগনে গ্যাস হই হই করে বেরিয়ে আসছে একটা গ্যালাক্সি থেকে। গ্যাস উগরে দিচ্ছে। আর সেই গ্যাসের উথালপাতাল চলছে গোটা একটা গ্যালাক্সি জুড়ে।
বছরে অন্তত কুড়িটি করে সূর্য বা তার চেয়ে অনেক অনেক গুণ বড় তারা বা নক্ষত্র ছিটকে ছিটকে বেরিয়ে আসছে ওই গ্যালাক্সি থেকে। আর সেগুলো ভনভন করে ছুটতে ছুটতে ছড়িয়ে পড়ছে ভূমণ্ডলের এখানে-ওখানে।
রীতিমতো মহাজাগতিক প্রলয় চলছে ওই গ্যালাক্সিতে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে সেই গ্যালাক্সির শরীর। গ্যাস, মহাজাগতিক ধুলোবালি আর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া সেই গ্যালাক্সির শরীরের বিভিন্ন দেহাংশ ছিটকে-ছড়িয়ে পড়ছে মহাবিশ্বের সর্বত্র।
সেই মহাপ্রলয়ে হাঁড়িতে যেনো টগবগ করে পানি ফুটছে। তাতে গলগল করে বেরিয়ে আসছে ধোঁয়া। আর সেই জল ফোটাচ্ছে কল্পনাতীত শক্তিশালী একটা পরমাণু চুল্লি। এক সঙ্গে কয়েক হাজার পরমাণু বা হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ যার কাছে একেবারেই নস্যি!
ওই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন, টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে সুবিশাল একটা গ্যালাক্সি। যা আমাদের ‘মিল্কি ওয়ে’র চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বড়। আর এই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে আলোকোজ্জ্বল (Luminous) গ্যালাক্সি।
আমাদের মিল্কি ওয়ের চেয়ে অন্তত দশ হাজার গুণ বেশি আলোকোজ্জ্বল। ওই মহাপ্রলয়ে এ দিকে ও দিকে অসম্ভব ঝোড়ো গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি তারা। যেগুলো আমাদের সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বড়। এমন মহাজাগতিক ঘটনা এই প্রথম নজরে এল জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের।
নাসার মিডিয়া সেলের তরফে এলিজাবেথ ল্যান্ডু জানিয়েছেন, ‘ওই গ্যালাক্সির নাম- ‘W2246-0526’। এই গ্যালাক্সিটি রয়েছে আমাদের পৃথিবী থেকে বারোশো চল্লিশ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। এই সদ্য-আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিটি মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম মহাজাগতিক বস্তু। নাসার ‘নিও ওয়াইড-ফিল্ড ইনফ্রারেড সার্ভে এক্সপ্লোরার’(NEOWISE)-এর পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চমকে দেওয়ার মতো খবর পাওয়া গিয়েছে।’
আমাদের এই গ্রহে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যে পরমাণু বোমাটি ফাটানো হয়েছিল, তার শক্তি ছিল ৫০ মেগাটন। তার মানে, ৫,০০০ কোটি কিলোগ্রাম ওজনের একটি বিস্ফোরক ফাটলে যতটা শক্তি বেরিয়ে আসে, ঠিক ততটাই। আর মহাবিশ্বের এই সবচেয়ে আলোকজ্জ্বল গ্যালাক্সিতে এখনো যে ভয়ঙ্কর ঝড় আর মহাপ্রলয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে ফাটছে কয়েক কোটি পরমাণু ও হাইড্রোজেন বোমা! যেনো একটা ছোটখাটো ‘বিগ ব্যাং’ বা প্রায় ১৪০০ কোটি বছর আগে ঘটা সেই মহা-বিস্ফোরণেরই একটা ক্ষুদ্র সংস্করণ।
কলকাতার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, এই ঘটনা রীতিমতো বিরল। কোনো গ্যালাক্সিতে এতটা ভয়ঙ্কর মহাপ্রলয়ের ঘটনা এর আগে আমাদের নজরে পড়েনি। অথচ এই মহাপ্রলয়ের ঘটনাটি চলছে প্রায় ৬০ কোটি বছর ধরে। এই গ্যালাক্সিটির জন্ম হয়েছিল ‘বিগ ব্যাং’-এর একশো কোটি বছর পরেই। মানে, ১,২৪০ কোটি বছর আগে।
এর ফলে, এই মহাপ্রলয়ের ঘটনা আমাদের ব্রহ্মাণ্ডের আরো অনেক আগেকার ঘটনা আমাদের নজরে নিয়ে এল। অন্যগুলোর মতো এই গ্যালাক্সিরও কেন্দ্র রয়েছে অসম্ভব ভারী একটি ব্ল্যাক হোল। যা আমাদের সূর্যের চেয়ে কম করে দশ হাজার কোটি গুণ ভারী।
এখন যে মহাপ্রলয়ের ঘটনাটি ঘটে চলেছে ওই সদ্য-আবিষ্কৃত গ্যালাক্সিতে, তা আমাদের মিল্কি ওয়ের মতো গ্যালাক্সিগুলোর আগের প্রজন্মের ঘটনা। যাকে বলে, ফার্স্ট জেনারেশান।
ওই গ্যালাক্সির যে বিপুল পরিমাণ কণার কৌণিক ভরবেগ (Angular Momentum) খুব কম, সেগুলোকে প্রায় ৬০ কোটি বছর ধরে গবগব করে খেয়ে নিচ্ছে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ওই ভয়ঙ্কর ভারী ব্ল্যাক হোলটি। এর পর ব্ল্যাক হোলটি খেতে শুরু করবে ওই গ্যালাক্সির মধ্যে থাকা সেই সব কণাকে, যাদের কৌণিক ভরবেগ খুব বেশি। কিন্তু গবগব করে খেতে গিয়ে ব্ল্যাক হোলটি সবটুকু খেয়ে উঠতে পারছে না।
‘এডিংটন রেট’ পেরিয়ে গেলেই উগরে দিচ্ছে, বমি করছে। আর সেটাই যেন আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে গ্যাস হিসেবে গলগল করে বেরিয়ে আসছে। আর তাতেই জন্ম হচ্ছে তীব্র আলোর। অবলোহিত রশ্মির। সেই আলোক-কণাও ঠেলে গ্যালাক্সি থেকে গ্যাস ও অসম্ভব রকমের গরম মহাজাগতিক ধুলোবালিকে ঠেলে গ্যালাক্সি থেকে বের করে দিচ্ছে। ছিটকে, ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে প্রতি পাঁচ বছরে সূর্যের চেয়ে অনেক বড় অন্তত ৫০০টা তারাকে।
এরাই পরে গড়ে তুলবে নতুন একটা গ্যালাক্সি। আর সেটা হবে আমাদের মিল্কি ওয়ের মতো ‘সেকেন্ড জেনারেশান’-এর গ্যালাক্সি। যেখানে আবহাওয়া এই মিল্কি ওয়ের মতো আরো পরিণত হয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
ভারতের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিমান নাথ জানাচ্ছেন, ‘গ্যালাক্সিতে মাঝে-মধ্যেই ঝড় ওঠে। আমাদের মিল্কি ওয়েতেও বড় ঝড় হয়েছে তিরিশ লক্ষ থেকে তিন কোটি বছর আগে। তবে সেই ঝড় এই মহাপ্রলয়ের কাছে একেবারেই নস্যি। দশ হাজার ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। এই ধরনের গ্যালাক্সিগুলোকে বলা হয়- ‘হট ডগ’ বা ‘এক্সট্রিমলি লুমিনাস ইনফ্রারেড গ্যালাক্সি (ইএলআইজি বা ‘এলিজ’)। তবে যে বিপুল পরিমাণ ‘ডার্ক ম্যাটার’ রয়েছে এই গ্যালাক্সিতে, তার জোরে এই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া গ্যালাক্সি একেবারে ব্ল্যাক হোলের অতল অন্ধকারেই পুরোপুরি ডুবে যাবে বলে মনে হয় না।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
This Post Has 0 Comments